বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা, আহতদের পুনর্বাসন, জুলাই হত্যার পুর্ণ তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার দাবি জানাই। হত্যাকারী যে বা যারাই হোক তাদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারেও আমার দ্বিমত নাই। নীতি নির্ধারণের অনেক বিষয়ে আমি বর্তমান এবং পরবর্তী বহু সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি , যেকোনো আন্দোলনের দাবি দাওয়ার সঙ্গেও আমি একমত বা দ্বিমত পোষণ করতে পারি তবে কোনোরকম বিচার বহির্ভূত হত্যা,হামলার পক্ষে আমি কখনোই ছিলাম না, এখনো নাই। আমরা অনেকেই ছিলাম না এবং নাই। আপনারাও নাই।
এইবার উইথ ডিউ রেসপেক্ট আপনাদের অতীত টানব।
দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিলেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছিলেন, ধর্ষিতা হয়েছিলেন তাদের পুনর্বাসন আপনারা কয়জন চেয়েছিলেন? আপনারা ঠিক কতজন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা তৈরিতে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছিলেন? আপনারা ঠিক কতজন একজন সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা বোধ করেছিলেন? বা এখনো করেন? বীরাঙ্গনাদের পরিপূর্ণ তালিকা ৫৩ বছরেও কেন হয় নাই, আপনারা কতজন সেটা জানতে চান? ১৫ বছর চুপ ছিলেন কেন জানতে চাই না তবে তার আগে কী করেছেন আপনারা?
পাকিস্তান এখন '৭১ সমস্যার' সমাধান চায়! আপনারা কতজন ৭১ এর গণহত্যায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমা না চাওয়া পাকিস্তনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার বিপক্ষে আজকে সারাদিনে একটা কথাও বলেছেন? শুক্কুরে শুক্কুরে আষ্ট দিন হয় নাই, আপনারা শেখ হাসিনাকে দেশে ঢুকতে দিবেন না,ফাঁসি চাইবেন - ফেয়ার ইনাফ! অবশ্যই চাইবেন, শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করবেন না। আর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে আপনারা বেঈমানী করায় পরোক্ষ সাপোর্ট দিবেন?
এইবার রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের জায়গা থেকে যথাবিহিত সম্মানপূর্বক একজন মাননীয় উপদেষ্টার মন্তব্যের সমালোচনা করব। ব্যক্তি নাহিদ নিয়ে আমার হয়তো কিছুই বলার থাকত না কিন্তু পদবীর জায়গা থেকে উপদেষ্টার মন্তব্য কঠোর সমালোচনা ডিজার্ভ করে।
নিচের তথ্যগুলো দেশের জাতীয় দৈনিক থেকে নেয়া।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ সাক্ষাৎ করেন।
গতকাল (১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অফিসকক্ষে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনার শুরুতে পাকিস্তান হাইকমিশনারকেকে সাক্ষাৎ করতে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান নাহিদ ইসলাম।
পাকিস্তান হাইকমিশনার বলেন, পাকিস্তান সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করে।
তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুদেশই খুব ভালো করছে। তাই এক্ষেত্রে উভয় দেশ যৌথভাবে কাজ করতে পারে।
এতটুকু পর্যন্ত কূটনৈতিক আলাপে আমার কোনো আপত্তি নাই। তবে পরের লাইনগুলো মনযোগ দিয়ে পড়েন। পরবর্তী ব্যাখ্যার জন্য আমি কিছু শব্দ নাম্বারিং করলাম।
এ সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, উপনিবেশবিরোধী লড়াই থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলন (১) পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের জনগণের দীর্ঘ ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে।
(২)
ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত সম্পর্ক রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার প্রয়োজন।
মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবেও পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের গভীর বন্ধন রয়েছে। যদিও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশেষত্ব দিয়েছে (৩)।
পাকিস্তানি হাইকমিশনার বলেন, আমরা ১৯৭১ এর প্রশ্নটিকে (৪) সমাধান করতে চাই। কিন্তু গত সরকার আমাদেরকে আলোচনার কোনো সুযোগ দেয়নি এবং ইচ্ছে করেই ৭১ ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখত। চাইলে বহু আগেই এটির সমাধান করা যেত। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭১ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামী লীগের আদর্শে ১৯৭১ ছিল ‘ইতিহাসের শেষ অধ্যায়’ (৫)। কিন্তু আমরা মনে করি এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। ১৯৪৭ বা পাকিস্তান আন্দোলন (৬) ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হতো না। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ৭১ এর প্রশ্নটিকে (৭) সমাধান করতে চাই। একটি গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আমাদের পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা প্রয়োজন। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে যেকোনো (৮) দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি চ্যানেল দেখা যায় না সে বিষয়ে হাইকমিশনার উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। (৯)
পাকিস্তান হাইকমিশনার বন্যা দুর্গতদের জন্য সহযোগিতার প্রস্তাব দিলে উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে (১০)। প্রয়োজন হলে জানানো হবে।
হাইকমিশনার বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে গত ১৫ বছর তাদের নানা ভাবে হয়রানি করা হয়েছে, বিশেষ করে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে এবং এয়ারপোর্টে এ সমস্যা সমাধানে তিনি উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বৈঠকে মিডিয়া, ক্রীড়া, যুব ও সংস্কৃতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।হাইকমিশনার পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট বিজয়ে অভিনন্দন জানান।
পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আলোচনা শেষ হয়।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (১১), কাউন্সিলর কামরান দাঙ্গাল, বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জায়িন আজিজ এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আপত্তির জায়গাগুলো পয়েন্ট আউট করি এইবার।
১ ও ২। এ সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, উপনিবেশবিরোধী লড়াই থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলন (১) পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের জনগণের দীর্ঘ ঐতিহাসিক সম্পর্ক (২) রয়েছে।
[ প্রথমত, পাকিস্তান আন্দোলনটা কী? এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধকে শেখ মুজিবের পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ এই আলোচনায় না জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে 'পাকিস্তান আন্দোলন' বলে সম্বোধন করার দুঃসাহস স্বাধীন বাংলাদেশের একজন উপদেষ্টার হয় কী করে? পাকিস্তান আন্দোলন বলতে যদি উনি ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার আন্দোলনকে বুঝিয়েও থাকেন , সেক্ষেত্রে এর পরবর্তীতে পশ্চিম পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে কিছু বললেন না কেন? উনার কনফিউশন বা আপত্তিটা কোন জায়গায়?
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ কালো ঐতিহাসিক অধ্যায় রয়েছে, সম্পর্ক নয়।
৩। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবেও পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের গভীর বন্ধন রয়েছে। যদিও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশেষত্ব দিয়েছে (৩)।
[বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশেষত্ব দেয়নি, সার্বভৌমত্ব দিয়েছে। পাকিস্তানের চাপিয়ে দেয়া উর্দু ভাষার বিরুদ্ধে করা আন্দোলনে বাংলার ছেলেরা শহীদ হয়েছেন।সেই আন্দোলনকে ভাষা আন্দোলন বলে। ভাষার জন্য আর কেউ প্রাণ দেয়নি বলে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে।]
৪।পাকিস্তানি হাইকমিশনার বলেন, আমরা ১৯৭১ এর প্রশ্নটিকে (৪) সমাধান করতে চাই।
৫। নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭১ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামী লীগের আদর্শে ১৯৭১ ছিল ‘ইতিহাসের শেষ অধ্যায়’ (৫)।
৬। কিন্তু আমরা মনে করি এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। ১৯৪৭ বা পাকিস্তান আন্দোলন (৬) ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হতো না।
[প্রথমত, ১৯৭১ এর কোনো প্রশ্ন নাই। যা আছে তা কাঁচের মত স্বচ্ছ। পাকিস্তান গণহত্যা , ইনফ্যাক্ট জেনোসাইডের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমা চাইবে।
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের আদর্শে ৭১ ইতিহাসের শেষ অধ্যায় - এই মন্তব্য উনি কিসের ভিত্তিতে করেছেন?
তৃতীয়ত, আবারো , মুক্তিযুদ্ধ উচ্চারণ করতে ঠিক কোথায় বাঁধে? ]
৭। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ৭১ এর প্রশ্নটিকে (৭) সমাধান করতে চাই।
৮। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে যেকোনো (৮) দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী।
৯। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি চ্যানেল দেখা যায় না সে বিষয়ে হাইকমিশনার উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রথমত, আরো একবার, ৭১ এর কোনো প্রশ্ন নাই।
পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে, এটা বলতে কাঁপে কোথায়?
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান কোনো 'যেকোনো' দেশ নয়। ১৯৭১ এ বাঙালি জাতি ধ্বংসের নীল নকশাকারী দেশ। গণহত্যাকারী দেশ। গণহত্যার সংখ্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, ৩০ লাখ!
তৃতীয়ত,পাকিস্তানে বাংলাদেশের চ্যানেল কি দেখায়? পাল্টা অভিযোগ আসবে না কেন?]
১০। বর্তমানে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে (১০)।
[বন্যা পরিস্থিতি তিন ভাগে বিভক্ত। বন্যা পূর্ববর্তী, বন্যাকালীন এবং বন্যা পরবর্তী। বাজারগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নাই। চিড়া-মুড়ি খেয়ে মানুষ সার্ভাইভ করে, জীবন যাপন করে না। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে বহিঃবিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাই যায়। তবে দেশের মানুষের তাতে পেট ভরে না।
১১। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (১১)............ উপস্থিত ছিলেন।
[পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে শুধু আপনারাই বসলেন এবং পাকিস্তানের সব কথা অবলীলায় মেনে নিলেন এবং তাল মেলালেন কেন? ]
যে দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা আনতে হয়েছে , যেই দেশ ৩০ লাখ মানুষ হত্যার, দুই লাখ ধর্ষণের অপরাধের ক্ষমা এখনো চায় নাই সেই দেশের হাইকমিশনার এর সঙ্গে একটা আপাদমস্তক সম্মুখ বৈঠকে 'মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, স্বাধীনতা , পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমা' এবং পাকিস্তানের হাইকমিশনারের একের পর এক ভুল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শব্দচয়নের প্রত্যুত্তর উচ্চারিত হয় নাই!
এগুলা শিশুসুলভ ভুল? এই উত্তরটা সন্তানস্নেহে উনাকে বা উনাদের আগলে রাখা জেনারেশন এক্স এবং বুমারদের করলাম।
লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, ভাষার রাজনীতি সূক্ষ্ণ ব্যাপার। সবাই হয়তো ধরতে পারে না। কেউ কেউ কিন্তু ঠিকই পারে।
সংযমী হউন।
লিখেছেন: মৌসুমী আক্তার স্মৃতি।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা।
No comments:
Post a Comment