নিজস্ব প্রতিবেদক: রাবির রুটিন উপাচার্য ড. আনন্দ কুমার সাহা কর্তৃক সদ্যনিয়োগ(১৩৮) সংক্রান্ত বিষয়ে অবিরাম মিথ্যাচার ও ৭৩ এর এ্যাক্ট লঙ্ঘন করার প্রতিবাদ এবং পদায়নের সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৬ জুন শনিবার বেলা সাড়ে ১২ টায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পিছনে এই সংবাদ সম্মেলন করে রাবিতে এডহক নিয়োগপ্রাপ্তরা।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামাত শিবিরের হামলায় পা হারানো, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, রাবির রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা আমাদের যোগদানকে অবৈধ ঘোষনা বলে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে নানা অজুহাতে আমাদের কর্মস্থলে যোগদান থেকে বিরত রেখেছেন। ৭৩’ এর অধ্যাদেশ মতে রুটিন উপাচার্য এ ধরণের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তিনি যা করছেন তা সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিতে মরিয়া বর্তমান রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা। তিনি এই নিয়োগ বাতিলে প্রতিনিয়ত মিথ্যার আশ্রয় এবং ৭৩ এর এ্যাক্ট লঙ্ঘন করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভুল ব্যাখ্যায় ভরা প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং ৭৩ এর এ্যাক্টের অমর্যাদা করেছেন।
প্রতিবেদনে যে তথ্য গুলো দিয়েছেন তা প্রত্যাখান করে সংবাদ সেসব পয়েন্টের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়।
রুটিন দায়িত্ব পালনকারী উপাচার্যের দেওয়া অভিযোগ ও তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হলো :
বর্তমান উপাচার্য কর্তৃক নিয়োগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভুল ব্যাখ্যার চিঠি
- ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য এ্যাডহকে নিয়োগ দিতে পারেন, তবে নিয়োগ দেওয়ার পর রিপোর্ট করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করা হয়নি।
- এক্ষেত্রে বর্তমান রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে দিয়েছেন।
- মুলত নিয়ম হলো; এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার পর পরবর্তী সিন্ডিকেটে রিপোর্ট প্রদান করতে হয়। গত ০৫.০৬.২০২১ ইং তারিখ এই নিয়োগ হওয়ার পর অদ্যবধি কোনো সিন্ডিকেট হয় নাই। এধরনের তথ্য গোপন ও মিথ্যাচারে আমরা নিজেরাই লজ্জিত।
- তিনি উল্লেখ করেছেন; রাবির রেজিষ্ট্রার মহোদয় উপস্থিত থাকা সত্তেও অন্য একজন কে দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে,যা ৭৩ এর এ্যাক্টের ব্যতয়।
- অথচ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আপনারা সকলেই জানেন রাবির রেজিস্টার গত ০৫.০৬.২০২১ এবং ০৬.০৬.২০২১ ইং তারিখ অজ্ঞত কারনে আত্মগোপনে ছিলেন এমনকি তাঁর নিজ ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ ছিলো।গত ০৭.০৬.২০২১ ইং তারিখ সে রাবিতে এসে তাঁর আত্মগোপনে যাওয়ার রহস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।
- অথচ রেজিস্টার চাকরির ২৪ ঘন্টা যে কোন সময় তাকে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। তার দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতি এক্ষেত্রে উপাচার্য অধিনস্থ কোন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে কার্য সম্পন্ন করতে পারেন। আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন.৭৩ এর এ্যাক্ট অনুযায়ী উপাচার্য মহোদয়ের উপর অর্পিত ক্ষমতা বলে রেজিঃ উপস্থিত থাকা সত্তেও তিনি অন্য কোন কর্মকর্তা দিয়ে কার্য সম্পাদন করতে পারেন।
- তিনি উল্লেখ করেছেন; যে সকল পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রক্রিয়াধীন সে সকল জায়গায় এ্যাডহক দেওয়া আইনসিদ্ধ নয়।
- অথচ এটাও মিথ্যা। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদের বিপরীতে এডহকে নিয়োগ দেওয়া হয় নি। বিজ্ঞপ্তি র বাইরে ৩০০ এর অধিক শুন্য পদ রয়েছে। সেগুলোর বিপরীতে এই এডহক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
- তিনি উল্লেখ করেছেন; শিক্ষক নিয়োগে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়নি এছাড়া অপেক্ষাকৃ্ত নিম্নমানের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
- অথচ রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে বর্তমান যে নীতিমালা রয়েছে সেই নীতিমালা প্রনয়নের সাত সদস্য কমিটির সভাপতি ছিলেন বর্তমান রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার শাহা।
- সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত ১৩৮ জনের মধ্যে ৯ জন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন
- রাবির ৭৩ এর এ্যাক্ট অনুযায়ী কোন বিভাগে বা অফিসে জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে বিভাগ বা অফিসের প্লানিং কমিটির বা কর্তৃপক্ষের চাহিদা পত্র থাকতে হবে;
- এখানেও তিনি অজ্ঞতা দেখিয়েছেন। এডহক নিয়োগের জন্য নয়, কোন চাকুরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে এই চাহিদাপত্র প্রয়োজন হয়।
- আবার এক্ষেত্রেও উপাচার্য যদি তাদের কাছে চাহিদা পত্র চেয়ে না পান তাহলে তিনি নিজ ক্ষমতাবলে সার্কুলার দিতে পারেন।
- সর্বশেষ উল্লেখ করেছেন; শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির নিয়মিত নিয়োগ এবং এ্যাডহক নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। অথচ সেই নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা তো নয় অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছিলো যা ১০.০১.২০২১ তারিখে সাবেক উপাচার্য নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ কে স্থগিত করেছেন। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মানুযায়ী এই নিয়োগ কে অবৈধ বলার কোন উপায় নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরর নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ কে স্থগিত করেন সাবেক উপাচার্য
সংবাদ সম্মেলনে নিয়োগপ্রাপ্তরা নিজেরাই হুমকি র মধ্যে আছে বলে জানান উপস্থিত নিয়োগপ্রাপ্তরা। নিয়োগপ্রাপ্তদের আন্দোলকারীদের যে কোন ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার বর্তমান উপাচার্য কে নিতে হবে।
এছাড়াও বর্তমান উপাচার্য আন্দোলনকারীদের হুমকি হিসেবে যে মিথ্যাচার করেছেন তা সম্পূর্ণ তাঁর দায়িত্ব পরিপন্থী।
সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, রুটিন দায়িত্ব পালনকারী উপাচার্য ড আনন্দ কুমার সাহা দায়িত্বে এসেই বিএনপি জামাতের কর্মকর্তাদের পদায়ন ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন করলে তারা জানান, দ্রুত সমাধান না করলে বর্তমান উপাচার্যের অপসারণসহ আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য হবো। এবং পদায়ন না পর্যন্ত সিন্ডিকেট মিটিং হতে দেওয়া হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন, রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ, মাসুদ রানা, দেলোয়ার হোসেন ডিলস, রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, তৌহিদ মুর্শেদ, সদস্য বোরহান উদ্দিন, রাজশাহী মহানগর যুবলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক একেএম আরকান বাপ্পি, রাবি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক মতিউর রহমান মর্তুজা।
No comments:
Post a Comment