ব্রেকিং নিউজ

Post Top Ad

August 08, 2021

রাবিতে স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি ; শিক্ষক সমাজের নিন্দা

 



 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পদে আলোচনায় তিন শিক্ষক কে নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরপরই প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। গত ৩ আগষ্ট প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ১৬ সদস্যের স্ক্যান করা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে স্বাক্ষর থাকা ২ জন শিক্ষক অস্বীকার করেছেন। এছাড়া ৪ সদস্য এবিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।


অভিযোগের চিঠিতে স্বাক্ষর থাকা ১৬ শিক্ষকের মধ্যে স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকদিন ধরে করোনা আক্রান্ত। বাসা থেকে বের হই না। ওই চিঠির বিষয়ে জানি না। কোনো মিটিংয়েও যাইনি, কোনো পেপারে স্বাক্ষরও করিনি।’


নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্ক্যান করা আরেকজন শিক্ষক বলেন, আমি বছরখানেক হলো রাজনীতিতে বেশি সময় দেই না। এই চিঠির বিষয়টি জানি না। স্বাক্ষরও করিনি এতে। হতে পারে পুরোনো কোনো চিঠির স্বাক্ষর এটায় যুক্ত করেছে। 


অন্যরাও এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। এই চিঠি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন শিক্ষকদের মধ্যে প্রকাশের পর থেকেই রাবি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের অনেক শিক্ষক এই চিঠির তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছেন।


চিঠিতে যে শিক্ষকদের সই রয়েছে তারা হলেন- অধ্যাপক তারিকুল হাসান, জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা অপু, আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, ড. শহিদুল আলম, প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, তানজিমা জোহরা হাবিব, ড. জাহানুর রহমান, এসএম এক্রাম উল্যাহ, মিজানুর রহমান-২, শাহরিয়ার জামান, ওমর ফারুক সরকার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নাসিমা আখতার, আসাবুল হক ও আবু জাফর মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।



রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর মলয় ভৌমিক চিঠির বিষয়ে বলেন, নিউজের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। সেখানে স্বাক্ষরকৃত কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না, কয়েকজন স্বাক্ষরের বিষয়ে অস্বীকারও করেছেন। মানে এটা ভুয়া অপপ্রচার হয়েছে। এটা যারা করেছে তারা কাজটি ঠিক করেনি। সুতরাং বলা যায় এটা সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন উড়ো চিঠি। সরকার এসব চিঠিকে কোন গুরুত্ব দিবেন না, এগুলো ভিত্তিহীন অপপ্রচার।


তিনি আরো বলেন, রাবিতে উপাচার্য পদে যিনি আসবেন প্রথমত তাঁকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে, দ্বিতীয়ত শিক্ষা যোগ্যতার দিক থেকে অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তি হবেন এবং সৎ মানুষ হবেন। সৎ, দক্ষ, প্রগতিমনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক কে সরকার মনোনীত করবেন।


তিনি জানান, এখন যদি সেইভাবে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে চান আর এটা জানার পরে এভাবে ভিত্তিহীন উড়ো চিঠি দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো মানে তারা চায় না মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কোন ব্যক্তি উপাচার্য হোক।



চিঠি সংক্রান্ত বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সিনিয়র শিক্ষক, দর্শন বিভাগের প্রফেসর ড. এস এম আবু বকর জানান, “দলের কনভেনরের নামে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে অসত্য কথা বলা হচ্ছে। তাঁর মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা, সৎ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আনুগত্য এরকম শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কমই আছে।

তিনি আরো বলেন, স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পরিচয়ে এরকম চিঠি দিয়ে থাকলে, এটা অগঠনতান্ত্রিক। এরা নির্বাচিত কনভেনরের বিরুদ্ধে যে কুৎসা রটনা করছে তা শিক্ষক সমাজেরই ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।”।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য ড. সুলতান মাহমুদ রানা তাঁর ফেসবুকে প্রেরিত চিঠির সমালোচনা করে লিখেন, “উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শুরু হয়েছে নানাবিধ আলোচনা-সমালোচনা। আলোচনা চলছে কে হচ্ছেন উপাচার্য। অন্যদিকে সমালোচনা চলছে কে যোগ্য আর কার কোন অযোগ্যতা। এই অযোগ্যতার সমালোচনাটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানানসই না হলেও অনেকদিন থেকে এমন নেতিবাচক সংস্কৃতি চর্চায় মেতে উঠেছেন অনেকেই । আর এই সংস্কৃতিতে শুধু রাবি শিক্ষকদের সম্মানহানিই হচ্ছে না, বরং গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার প্রশ্নে আঘাত হানছে। রাবি উপাচার্য নিয়োগে যতই বিলম্ব হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটও ততই ঘনীভূত হচ্ছে। শিক্ষকদের নামে-বেনামে নানা উড়োচিঠি দিয়ে সমালোচনার সংস্কৃতিকে নিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমনকি সরকারের উচ্চমহলে এমন নেতিবাচক চিঠি প্রেরণের ঘটনা আমাদেরকে লজ্জিত করে তুলেছে। এহেন সংস্কৃতির জন্য আমরা লজ্জিত, দুঃখিত! আমরা শিক্ষক সমাজ এমন সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে আগামী দিনগুলোতে শিক্ষার ইতিবাচক সংস্কৃতি রক্ষা করা মোটেই সম্ভব হবে না।”


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একটা ঐতিহ্য আছে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচিত কিছু সদস্য এই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নির্বাচিত আহবায়ক প্রফেসর ড. মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে আমার পজিটিভ ইমেজকে বিতর্কিত করতে তারা বিভিন্ন জায়গায় আমার নামে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন। এমন মিথ্যা শুনতে শুনতে ক্লান্ত।

‘এখন শুনছি তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নানা অভিযোগ করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে হেয় করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এমন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক স্বনামধন্য শিক্ষককে তারা জামায়াত-বিএনপি আখ্যা দিয়ে নানা অপবাদ রটিয়েছেন। আমাকে বিএনপি-জামায়াত বানাতে পারেননি তাই ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করেছেন।’


সংবাদ সুত্র: চাঁপাই ট্রিবিউন 

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad